মিথ্যাবাদি ময়না


শুভ,কড়া করে একটা চা বানিয়ে দাওতো।-বুঝলেন স্যার আজকে আমার মনটা অত্যধিক খারাপ।আর মন যখন খারাপ থাকে তখন আর ভালো চা বানাতে পারিনা আমি।-তা, তোমার মন এতো খারাপ কেন?-কারণ স্যার আমার ময়না পাখির মনটা খুব খারাপ। ময়না পাখীর মা’য়ের খুব বড় অসুখ।কথাগুলো বলেই শুভ আমার জন্য চা বানাতে লাগলো।শুভ’র সাথে আমার পরিচয় নতুন অফিসে জয়েন্ট করার পর। বিকেল বেলা,অফিস ছুটির পর রোজ আমি হাঁটতে হাঁটতে নির্জনের এই চা দোকানে এসে বসি।আর সুযোগ পেলেই শুভ তার ময়না পাখির নানান গল্প শোনাতে থাকে আমায়।
-আপনি কি জানেন, স্যার? বড় হলে পাখীদেরও অনেক দূরে চলে যেতে হয়,তারমা কে ছেড়ে।-কই আমি তো জানিনা তেমন। -স্যার কথাটা কিন্তু একদম সত্তি। আসলে ঘটনাটা হলো,ময়না পাখি ওর মায়ের সাথেশেষ রাতে বাসায় বসে আছে।মা পাখি ময়না পাখীকে বললো, কাল তুই অনেকদূরেচলে যাবি। আজ রাতটা একটু ভালো করে ঘুমিয়ে নে।ময়না পাখি সেটা শুনে,তখন মা’কে বলে, মা তুমি ঘুমাও। আমার তো ঘুম আসেনা।-বুঝলেন স্যার, ময়না পাখিটা এখানে একটা কঠিন মিথ্যা কথা বললো।-কি মিথ্যা কথা বললো তোমার ময়না পাখি?-আরে স্যার ময়না পাখিটারও খুব ঘুম আসছিলো।কিন্তু ঘুমিয়ে গেলে মা’য়ের মুখ আর দেখতে পাবেনা বলেই তো মা’কে মিথ্যা বললো।-আচ্ছা স্যার, পাখীরা যখন মিথ্যা কথা বলে তখন কি ওদেরও অনেক পাপ হয়। আমার ময়না পাখিটা না খুব ঘন ঘন মিথ্যা কথা বলে।আমি চা টা শেষ করেই নিজের বাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করি। আর মনে মনে ভাবি।ছেলেটা আসলেই একটু পাগলা স্বভাবের।শুভ’র কি আসলেই কোনো ময়না পাখি আছে? কাজের ব্যস্ততায় অনেক দিন আর অফিস শেষে শুভ’র চায়ের দোকানে যাওয়া হয়নি।তাই কিছুদিন পর ওর দোকানে হাজির হলাম।দেখলাম শুভ চুপ করে বসে আছে।-ভালো আছেন, স্যার?-হুম ভালো, তোমার খবর কি?-আমি স্যার ভালাই আছি।তবে ময়না পাখি’র একটা কথা মনে পড়ে মনটা খুব খারাপ লাগছে।-তাহলে তো তুমি আর ভালো চা বানাতে পারবেনা আজ।শুভ আমার কথা শুনে একটু হাসে।-তা কি কথা বললো তোমার ময়না পাখি?-ময়না পাখি মা’কে ছেড়ে যেদিন চলে আসবে,সেদিনের কথা।ময়না পাখিটা তার মাকে ছেড়ে অনেকদূর চলে গেল। কিন্তু তারপর হঠাৎ কি মনে করে, আবার ঘরে ফিরে এলো।ময়না পাখির মা, বললো- কী রে কি হল, আবার ফিরে এলি যে? বড় হয়েছিস দূরে তো যেতেই হবে।ময়না পাখি তার মা’কে বলে- ভুল করে একটা জিনিস ফেলে গিয়েছিলাম,সেটাইনিতে আসলাম।-কিছু বুঝলেন স্যার।-না তো।-ময়না পাখিটা মায়ের সাথে আবারো কঠিনএকটা মিথ্যা কথা বললো।-এখানে আবার কি মিথ্যা বললো তোমার ময়না পাখি?-আসলে স্যার ময়না পাখিটা তার মাকে দেখার জন্য আরেক বার ঘরে গেলো।কিছু ফেলে আসা ছিলো ময়না পাখির বাহানা মাত্র।-তা তুমি কিভাবে জানলে এসব?-আরে ময়না পাখিটাই তো এসব কথা আমাকে বললো।আমি চা’এর কাপে শেষ চুমুক টা দিয়ে বললাম-শুভ ফার্স্ট ক্লাস চা বানিয়েছো আজ।এভাবেই মাঝে মাঝে আমি শুভ’র চায়ের দোকানে যাই অফিস শেষে।চায়ের চুমুকের ফাঁকে ফাঁকে শুভর ময়না পাখির গল্প শুনতাম।বেশীর ভাগই তার দুখের গল্প।এরপর হঠাত আমি বদলি নিয়ে অন্য যায়গায় চলে গেলাম।তাই শুভ’র সাথে আরদেখাও হত না আর অনেক দিন আর শুভ’র হাতের চা খেতে যাওয়া হয়নি।তাই একদিন অফিস ছুটির একটু আগে বেড়িয়ে পড়লাম শুভ’র চায়ের দোকানে যাবো বলে।নতুন অফিস থেকে এর দুরত্ব অনেক তাই তাড়াতাড়িই বেরলাম,কিন্তু শুভ’র চায়ের দোকানে গিয়ে দেখি শুভ নেই।অন্য একটা লোক কাজ করছে,তাকেই জিগ্গাসা করলাম।-শুভ কোথায়।-শুভ তো কাজ ছেড়ে দিয়েছে কিছুদিন হল।-হুট করেই কাজ ছেড়ে দিলো ছেলেটা।কোথায় থাকে ও বলতে পারবেন একটু?-ওর মা খুব অসুস্থ,মার চিকিৎসার জন্য অনেক টাকা লাগবে তাই গ্রাম থেকে এখানে এসেছিল কাজের খোঁজে।আমার দোকানে একদিন এসে কাজের কথা বললো।আমিও ওকে রেখে দিলাম।যাবার দিন আমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা ধার চাইলো। আমার নিজের পুঁজিই ৫০০ টাকা নেই ওকে দেব কি করে? তাই ১০০ টাকা দিয়ে বিদায় করলাম।এর পর আমি দোকানের মালিকের কাছে থেকে ওর গ্রাম আর বাড়ির ঠিকানা নিয়েএকদিন অফিস ছুটি করে অনেক খোঁজা খুঁজির পর ওর বাড়ি পৌঁছালাম।দেখি একটা ভাঙাচোড়া তক্তপোশ এর ওপর একজন জরাজীর্ণ মহিলা শুয়ে আছেন, আর শুভ মহিলার পায়ের কাছে বসে আছে।আমার আর বুঝতে দেরি হল না এটাই ওর মা।শুভ’র মা বলছে- আর কতদিন তুই এভাবে বসে থাকবি মায়ের কাছে?ভালো কাজ করে রুজি রোজগার করতে হবেনা,তার পর একটা মেয়েদেখে বিয়ে দিয়ে তার হাতে তোকে তুলে দিয়ে আমি বিদায় নেব।এভাবে বসে থাকলে চলবে?-মা’গো কোনো চিন্তা করোনা তো।আমি যেখানে কাজ করি সেখানে তো মালিকের কাছে অনেক টাকা জমা আছে আর অনেক ছুটিও জমা আছে। মালিকের কাছ থেকে জমানো টাকা নেব আর আরাম সে খরচ করবো।চিন্তা কি?শুভ”র মা বলেন- এইদিকে আয়, আমার কাছে আয়।শুভ মায়ের পা’য়ের কাছে থেকে মা’য়ের মাথার কাছে গিয়ে বসে। শুভ’র মা শুভ’র মাথায় হাত রেখে বলেন- ময়নারে তুই বড্ড বেশি মিথ্যা কথা বলিস।——
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment

0 comments:

Post a Comment