ভ্যালেনস্টাইন ডে

একটা গিফট কিনে তারাতারি বাস টাতে উঠলাম চাপাচাপি করে।ভাগ্যক্রমে সাথে সাথে বসার সিট ও পেয়ে গেলাম।আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি সবাই যে যার মনের মানুষটার সাথে দেখা করতে যাচ্ছে,আমিও আলাদা নই।মেয়েটার সাথে আমার পরিচয়টা ফেসবুকেই।আজ এমন একটা দিনে ও আমায় দেখা করতে বলবে ভাবতেও পারিনি।এইসব কথা ভাবতে ভাবতে হঠাত খেয়াল করলাম আমার পাশে বসে আছে একটামেয়ে।এতক্ষন একটা মেয়ের পাশে বসে আছি বুঝতেই পারিনি।মেয়েদের পাশে বসলে বরাবরই নিজেকে খুব অসহায় লাগে।আজকেও এর ব্যতিক্রম হল না,বরং আজ অসহায়ের মাত্রা একটু বেশিই হচ্ছে।ইচ্ছে করছে চলন্ত বাসটা থেকেই লাফ মেরে পড়ে যাই।আমার অসহায় টাইপ মুখটা দেখে মেয়েটা মিটিমিটি করে হেসেই যাচ্ছে। আমিও ওকে পাত্তা না দেওয়ার ভাব নিয়ে কানে হেডফোন গুজে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলাম।তার আগে আড় চোখে মেয়েটাকে খুব নিঁখুত ভাবে দেখে নিলাম।গায়ের রং শ্যামলা,চোখে চশমা কিন্তু মেয়েটাকে দেখতে বেশ সুন্দরী। প্রথম দেখাতেই চোখ বন্ধ করে যাদের প্রেম নিবেদন করা যায়। আমি আবার আড়চোখে দেখলাম মেয়েটি আশেপাশের কোন কিছুর দিকে খেয়াল না করে এক মনে মোবাইলএ কি করে যাচ্ছে।লেখার স্টাইল দেখে অনুমান করলাম ফেসবুকে হয়তো কারো সাথে চ্যাট করছে।আমিও ফেসবুক করি এটা দেখানোর জন্য মোবাইল টা হাতে নিয়ে আলোর বেগে ফেসবুক খুললাম।আড় চোখে আবার দেখতে গিয়ে দেখলাম মেয়েটিও আমার কান্ড কারখানা আড় চোখে দেখছে।তবে কেন জানি মনে হল এতো লুকোচুরির মাঝেও মেয়েটির চোখের কোনে মন খারাপের একটা চিহ্ন রয়েছে।এদিকে আমি ফেসবুকে ঢুকেই দেখি তানিয়ার মেসেজ।একসাথে ৭টা মেসেজ পাঠিয়েছে,পর পর এত মেসেজ মানে ভীষণ রেগে আছে।মেয়েটা যখন তখন রেগে যায় আমার উপর।আজ দেখা করবো বলে সকাল থেকে তেমন কোনো খবর নেওয়া হয়নি সেই কারণেই হয়তো হবে।মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে কথায় কথায় রাগ করে।কিন্তু মজার বিষয় হল আমরা এখনো কেউ কাউকে দেখিনি।এমনকি কেউ কারো ফোন নাম্বার টাও জানি না।তবে আমরা একই শহরেই থাকি।আমি অনেক বার ওর সাথে দেখা করার কথা বলেছিলাম কিন্তু ও দেখা করার আগ্রহ দেখাই নি।শুধু চ্যাট করেই মেয়েটার প্রেমে পড়ে গিয়েছি।পরপর অনেক গুলো মেসেজ দিলাম কিন্তু তানিয়ার রাগটা কিছুতেই ভাঙ্গছে না।হঠাত্ আমার মোটা মাথায় এক বুদ্ধি আসল।মেয়েরা মেয়েদেরকেই হিংসে করে সব থেকে বেশি তাও যদি পছন্দের মানুষ নিয়ে হয়।তাই এই সুত্রটা কাজে লাগিয়ে রাগ ভাঙ্গানোর জন্য ওকে এগারো নম্বর মেসেজ দিলাম-জানো, এখন আমি একটা সুন্দরী মেয়ের পাশে বসে আছি গাড়িতে।মেয়েটাকেযতই দেখছি ততবারই প্রেমে পরে যাচ্ছি।যা ভেবেছি তাই ।এবার ঠিকই রিপ্লাই আসল,-তুমি কি ঐ মেয়েটার সাথে কথা বলছো।এখনো বলছি অন্য দিকে তাকাও।আমার মাথাটা গরম করো না আর।-না এখনো বলি নি কথা।তবে আপনার রাগ না কমলে ভাবছি কথা বলবো।-নিজে অন্যায় করে এখন আমাকেই ব্ল্যাক মেইল করা হচ্ছে শয়তান,বাজে ছেলে একটা।হঠাত ১০০০ ভোল্টের রাগটাও আস্তে আস্তে কমে 0 ভোল্টে চলে এলো।এইসকল কারনেই মায়েটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি।হঠাত কি মনে করে পাশে বসা মেয়েটির দিকে একবার তাকালাম।মেয়েটিরশ্যামলা মুখখানা যেন মেঘলা হয়ে আছে,খারাপ লাগছে না।নিজের মনে অনুমান করলাম হয়তো কাছের কেউ কিছু বলেছে তাই এই অবস্হা।তানিয়াকেএবার মেসেজ দিলাম,-কি করছো?কতদূর আছো এখন?আমাকে যদি অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাহলে পানিসমেন্ট আছে তোমার।-এইতো এসে গিয়েছি।বাসে আছি এখন।আর এত তাড়াহুড়ো করোনাতো।-ওকে বাবা তাড়াহুড়ো করতে হবেনা।আর বসার সিট পেয়েছোতো?-হমমম পেয়েছি,তবে আমার পাশে একটা গোবর গনেশ বসে আছে।খুব ভাব নিচ্ছে,আমার দিকে ভালো করে তাকিয়েও দেখছে না।এটা শোনা মাত্র আমার কান খাড়া হয়ে গেল।বুকএর ভিতরে কে যেন হাতুড়ি পেটাতে শুরু করল।পাশে বসা মেয়েটার দিকে একটু এগিয়ে ওর মোবাইলটা দেখার চেষ্টা করলাম।আর যা দেখলাম তা দেখে আমি কিছুক্ষনের জন্য আমার থেকে হারিয়ে গেলাম।ওর ইনবক্সে আমার আইডি নেম।আমি বিশ্বাস ই করতে পারছি না এইমেয়েটা তানিয়া।কিছুক্ষণপর যখন নিজের মধ্যে ফিরলাম তখন ওকে রিপ্লাই দিলাম।-ছেলেটা দেখতে কেমন? তোমার পছন্দ হয়ে গিয়েছে নাকি?-দেখ আমার মাথাটা গরম করো না।তবে দেখতে মন্দ না।-সাদা চেক শার্ট এ খুব মানিয়েছে।নিজের শার্টের দিকে তাকিয়ে দেখলাম হমম আমার টাও তো একই।এবার আমি পাশে বসা ওর দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম।ও বোধ হয় ভয় পাচ্ছে।চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।অদৃশ্য মানুষ হয়ে কাছের মানুষ গুলো কে ভয় দেখানোর মাঝে যে এতো মজা তা এই প্রথম তা টের পেলাম।এবার কিছুটা মজা করেই ওর দিকে তাকিয়ে একটা শয়তানের হাসি দিলাম । ও কপালে বিরক্তির ভাজ টেনে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো।ওর কাছ থেকে মেসেজ আসলো,-জানো তো ঐ ছেলে টা আমার দিকে কেমন করে জানি তাকাচ্ছে।আমার খুব বিরক্তি লাগছে।বাজে ছেলে একটা।সহ্য হচ্ছেনা আমার একদম।বাস থেকে নামতে পারলে যেন বাঁচি।এবার আমি হাসি আর আটকাতে পারলাম না।একাএকাই হেসে ফেললাম।ও আমার দিকে বিস্ময়ের চোখে বার বার তাকাচ্ছে।হয়তো আমাকে পাগল ভাবছে।কিন্তু আমি হেসেই যাচ্ছি।বাসটাও চলে এসেছে প্রায় আমাদের দেখা করার গন্তব্যের কাছাকাছি,তাই নামার সময় হয়ে এসেছে।ওকে আর একবার মেসেজ দিলাম,-আচ্ছা ধরো আজ গিয়ে দেখলে বাসে তোমার পাসে বসা ওই বাজে ছেলেটাই আমি,তাহলে কি করবে?-তুমি কেন আমার মাথাটা গরম করছো,তুমি কি চাও আমি তোমার সাথে দেখা না করে চলে যাই?আমি আর কোন কথা না বারিয়ে ওকে শেষ রিপ্লাই করলাম।-ওকে রাগ করো না,এবার অফ করো আর সাবধানে নেমও।এই বলে আমি অফ হয়ে একটু আগেই বাস থেকে নেমে গেলাম,রাস্তায় বেশ জ্যাম তাই ভাবলাম পায়ে হেটেই ওর আগে ওখানে পৌছে যাব।রিতি মত আমি ওই স্থানে গিয়ে দাঁড়িয়েআছি,কিছুক্ষনের মধ্যেই বাস টাও এসে থামলো।তানিয়াও বাস থেকে নামলো।আমিনিজেকে কিছুটা প্রস্তুত করে নিলাম।তানিয়া রাস্তা পেরিয়ে যথা স্থানে এসে দাড়ালো।আমিও গিয়ে ওর পাশেই দাঁড়ালাম।ও আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে অসস্থিকর চাউনি দিয়ে কিছু বলতে যাবার আগেই আমি ওর হাতে গিফট টা ধরিয়ে দিয়ে ওকে বললাম-I LOVE U তানিয়া।ও কৌতুহল বিস্ময় ভয় লজ্জা সব কিছুকেই এক সাথে করে গোল গোল চোখে আমায় জিজ্ঞাস করলো,-আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে?আমিও গোলগোল চোখে বললাম,তুমি ফেসবুকের যে পাগল,শয়তান,আর বাজে ছেলেটার সাথে এখানে দেখা করতে এসেছো,আমি সেই ছেলেটা।এই বলে আমি আমার ফোন এ আমার ফেসবুক আই ডি টা খুলে ওর হাতে প্রমান স্বরুপ ধরিয়ে দিলাম।ও মোবাইল টা নিয়ে মাথা নিছু করে আমার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো,ঠিক বুঝতে পারলাম না এটা ওর রাগ না অনুরাগ না লজ্জা?আর আমি আনন্দ ভরা চোখে পৃথিবীর শ্রেষ্ট সুখি মানুষের মতো ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম। জানিনা কতক্ষন এই ভাবে দুজনে দাঁড়িয়ে ছিলাম।
Share on Google Plus

About Unknown

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment

0 comments:

Post a Comment